অধিকার, নেতৃত্ব ও স্বচ্ছতার প্রতীক ছাত্র সংসদ: বেরোবি শিক্ষার্থীদের অভিমত

প্রকাশিত: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১:২৫

Thumbnail
ছবি: দ্যা ঢাকা ডায়েরি সম্পাদিত
চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে জোর দাবি ওঠে। ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিগগিরই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
 
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থীরাও দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছেন। এ দাবিতে তারা সংবাদ সম্মেলন, স্মারকলিপি প্রদান, অবস্থান কর্মসূচি এবং সর্বশেষ আমরণ অনশন পর্যন্ত করেন। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. শওকাত আলী ঘোষণা দেন আগামী ৩০ অক্টোবরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করা হবে। 
 
উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান আইনে ছাত্র সংসদ নেই। তাই ছাত্র সংসদকে আইনে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রজ্ঞাপন জারি হলেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
 
তবে অক্টোবর মাস চলে এলেও এখনো সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি। ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
 
ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ও ভাবনা জানতে চেয়েছে দ্যা ঢাকা ডায়েরি। এবিষয়ে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান আশিক বলেন, দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি ছাত্র সংসদ নির্বাচন। শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, তাদের মতামত ও সমস্যা প্রশাসনের কাছে পৌঁছানো, ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা এবং নেতৃত্বগুণ বিকাশে একটি শক্তিশালী ও কার্যকর ছাত্র সংসদ অপরিহার্য। লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির সবচেয়ে খারাপ দিক হলো কেন্দ্রীয় নেতার নির্দেশে কাজ করা। জুলাই বিপ্লবে আমরা দেখেছি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় নির্দেশে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিয়ে নেমেছিল। আমরা চাই, শিক্ষার্থীদের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি যেন শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেট নিয়ে কাজ করেন।
 
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী উম্মে জেবিন বলেন, বেরোবিতে ছাত্র সংসদ প্রতিষ্ঠার দাবি শিক্ষার্থীদের ন্যায়সঙ্গত প্রত্যাশার প্রতিফলন। একটি নির্বাচিত প্রতিনিধি কাঠামো গড়ে উঠলে শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকার, সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা সরাসরি প্রশাসনের কাছে তুলে ধরতে পারবে। এতে অংশগ্রহণমূলক গণতান্ত্রিক চর্চা নিশ্চিত হবে, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আসবে এবং একাডেমিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ সমৃদ্ধ হবে।
 
অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষার্থী তানভীর হাসান দিপু বলেন, ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি আদায়ের একমাত্র কার্যকর প্ল্যাটফর্ম। যেমন দেশের পার্লামেন্ট মানুষের চাওয়া–পাওয়ার প্রতিফলন ঘটায়, তেমনিভাবে ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরে। এটি নেতৃত্ব বিকাশ করে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে সাহস জোগায় এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করে। তাই ছাত্র সংসদ প্রতিটি শিক্ষার্থীর মৌলিক অধিকার।
 
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তাসনিমা তাবাস্সুম বলেন, আমি চাই আমার কণ্ঠস্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তগুলোতে প্রতিফলিত হোক। আবাসন সংকট, ক্লাসরুমের ঘাটতি, শিক্ষক সংকটসহ নানা সমস্যা শিক্ষার পথে বাধা হয়ে আছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লেও বেরোবি এখনো পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি। এসব সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধান আনতে ছাত্র সংসদ জরুরি। এছাড়া এটি লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির বাইরে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বৈধ ও শিক্ষার্থীবান্ধব প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলবে।
 
মার্কেটিং বিভাগের সজীব গাজী বলেন, ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা, অধিকার আদায়, জবাবদিহিতা নিশ্চিত ও নেতৃত্ব বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম। নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্ম না থাকায় শিক্ষার্থীরা প্রশাসন বা উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের কাছে দাবি পৌঁছে দিতে সমস্যায় পড়ে। ছাত্র সংসদ থাকলে শিক্ষার্থীরা তাদের সমস্যার কথা সরাসরি তুলে ধরতে পারবে, নেতৃত্বের মাধ্যমে কর্মসূচি বাস্তবায়ন হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন, শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এছাড়া এটি সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও শিক্ষাবিষয়ক কর্মকাণ্ডে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে এবং গণতান্ত্রিক চর্চা শক্তিশালী করে।
 
শিক্ষার্থীদের মতে, বেরোবির ছাত্র সংসদ প্রতিষ্ঠা হলে তাদের ন্যায্য দাবি ও যৌক্তিক প্রত্যাশা পূরণের পাশাপাশি একটি স্বচ্ছ, গণতান্ত্রিক ও অংশগ্রহণমূলক পরিবেশ নিশ্চিত হবে।
 
 
টিডিডি/ এএইচআর