নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের গুরুত্ব: শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভাবনা

প্রকাশিত: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪:০৬

Thumbnail
ছবি: টিডিডি সম্পাদিত

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও আইনে ছিলো না ছাত্র সংসদ নির্বাচনের কোনো বিধান। তবে সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের আন্দোলন ও দাবির প্রেক্ষিতে প্রশাসন নির্বাচন আয়োজনে উদ্যোগী হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় ​প্রশাসন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কয়েক দফায় উন্মুক্ত আলোচনার পর 'নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (নাকসু)' ও হল সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্যে খসড়া গঠনতন্ত্র প্রকাশ করেছে। খসড়া অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় সংসদে ২১ জন কার্যনির্বাহী সদস্য এবং হল সংসদেও প্রতিনিধি থাকবে।

শিক্ষার্থীরা নিয়মিত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ নির্বাচন এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনী রোডম্যাপ ও তফসিল ঘোষণার দাবি জানিয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় দ্রুত আইন সংশোধন ও নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন (ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র ইউনিয়ন ইত্যাদি) ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে ইতিবাচক ছাত্র রাজনীতির ক্ষেত্র তৈরি এবং যোগ্য নেতৃত্ব বিকাশের জন্য অপরিহার্য বলে মনে করে।

​শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে দ্রুততম সময়ে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের নির্বাচিত ছাত্র সংসদ গঠিত হোক। এই সংসদ তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক মান উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন।

ছাত্রসংসদের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয় সম্পর্কে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রবিন আহমেদ রাব্বি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বগুণ ও গণতান্ত্রিক চর্চার সুযোগ তৈরি করে। এটি প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে এবং একাডেমিক, সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে ভূমিকা রেখে শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা ও সর্বাঙ্গীন বিকাশে সহায়তা করে।”

স্থানীয় সরকার ও নগর উন্নয়ন বিভাগের ২০২৩-২৪ বর্ষের শিক্ষার্থী সেলিনা সেলী জানান,  “নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (নাকসু) জরুরি, কারণ এটি শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ ও অধিকার আদায়ে ভূমিকা রাখবে। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র হয়ে সমস্যা সমাধান ও প্রশাসনের সঙ্গে সেতুবন্ধন গড়ে তুলবেন। নাকসু অন্যান্য সংগঠন থেকে ভিন্ন, কারণ এটি শিক্ষার্থীদের সরাসরি ভোটে গঠিত হয়ে সবার নিরপেক্ষ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করবে। আমাদের প্রত্যাশা, নাকসু দলীয় প্রভাবমুক্ত থেকে শিক্ষার্থী-বান্ধব পরিবেশ ও গণতান্ত্রিক চর্চা প্রতিষ্ঠা করবে।”

এ বিষয়ে হিসাব বিজ্ঞান তথ্য ও পদ্ধতি বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ইলিয়াস হোসেন বলেন, “ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের মতামত, চাহিদা ও সমস্যা সরাসরি তুলে ধরার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। শিক্ষক ও প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন এবং সমস্যা সমাধান দ্রুত সম্ভব। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবি ও সমাধান নিশ্চিত করতে ছাত্র সংসদ অপরিহার্য। ছাত্র সংসদ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক জটিলতা ছাড়াই দ্রুত অধিকার পাবে। প্রতিটি শিক্ষার্থী নিজস্ব নির্বাচিত প্রতিনিধি পাবে, যিনি সবার সুবিধা নিশ্চিত করবেন। এতে সংগঠনের ভেতরে-বাইরে থাকা সব শিক্ষার্থীরই সমান সুযোগ তৈরি হবে এবং ছাত্র সংসদ কার্যকরভাবে পুরো ক্যাম্পাসের প্রতিনিধিত্ব করবে।

ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক ড. মো. আশরাফুল আলম জানান, “ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক রীতি-নীতির সঙ্গে পরিচিত করে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাদের অধিকার ও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে। এটি প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে কার্যকর সেতুবন্ধন গড়ে তোলে, যার মাধ্যমে আলোচনার সুযোগ বাড়ে ও সংঘাত কমে। শিক্ষার্থীদের মাঝে নেতৃত্ব, পরিকল্পনা ও দলগত কাজের দক্ষতা বিকাশেও এটি সহায়ক। জাতীয় কবির নামাঙ্কিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কবির আদর্শ- গণতন্ত্র, সাম্য ও মানবতার চেতনাকে বাস্তবে রূপ দিতে ৭৩-এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর ন্যায় নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্র সংসদ গঠন এখন শিক্ষার্থীদের সময়ের দাবি।

 

টিডিডি/ এএইচআর