ডাকসু নির্বাচনের দুইদিন আগে নীলক্ষেতে ব্যালট: ছবিটা প্রশাসনকে আগে দেয়নি কেন?
প্রকাশিত: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:৩৯

দীর্ঘ ছয় বছর পর অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে ঘিরে ফের বিতর্ক দেখা দিয়েছে। ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির-সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও, ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলসহ কয়েকটি বিরোধী পক্ষ নির্বাচনকে ঘিরে নানা অনিয়মের অভিযোগ এনেছে।
অভিযোগ অনুযায়ী, নির্বাচনের দুই দিন আগে, ৭ সেপ্টেম্বর, নীলক্ষেতের গাউসুল আজম মার্কেটের একটি ছাপাখানায় বিপুলসংখ্যক ব্যালট পেপার অরক্ষিত অবস্থায় পাওয়া যায়। ২২ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা বিষয়টি প্রকাশ করেন এবং একটি ছবি প্রদর্শন করেন, যা তাদের দাবি অনুযায়ী, ওই দিন ওই ছাপাখানায় তোলা।
অন্যদিকে, ডাকসু নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য হলো, অরক্ষিত ব্যালটের ছবিটা নির্বাচনের দুইদিন আগের। যারা পেয়েছে তারা নির্বাচনের আগেই কেন প্রশাসনকে জানাননি? নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পরেই কেন এসব অভিযোগ করছেন?
"ভোটের আগে জানালে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারতাম"
ডাকসু নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন এই অভিযোগ সম্পর্কে দ্যা ঢাকা ডায়েরিকে বলেন, "ব্যালটের যে ছবির কথা তারা বলছে, এটা তো ভোটের আগে আমাদের জানানো উচিত ছিল। তাহলে আমরা তড়িৎ গতিতে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারতাম। ভোট সুষ্ঠু হয়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নাই। এখন যেহেতু তারা অভিযোগ জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টা দেখবে। এর সাথে ভোটের কোনো সম্পর্ক নাই। আর কারচুপির মতো কিছুই ঘটেনি। এতো ক্যামেরা, এতো সাংবাদিক, এতো এনএসআই, এতো এজেন্সি—এরকম কিছু হলে সাথে সাথে কারো না কারো চোখে ধরা পড়তো।"
"গাউসুল আজম মার্কেট কি নিষিদ্ধ জায়গা?"
ব্যালট কোথায় ছাপানো হয়েছে এবং তা গাউসুল আজম মার্কেটেই কি না—এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. জসীম উদ্দিন বলেন, "গাউসুল আজম মার্কেট কি নিষিদ্ধ জায়গা? ওরা ওদের সুবিধা মতো কোনো এক জায়গায় হয়তো ছাপিয়েছে। তারা যথার্থ নিরাপত্তা মেনে চলেছে। যদি না হতো, তাহলে সবার হাতে হাতে ব্যালট পেপার থাকার কথা। এটা যদি কোনোভাবে আউট হতো, তাহলে সবার হাতে থাকতো বিষয়টা।"
তিনি আরও বলেন, "তাদের যে অভিযোগ, এটা তদন্তের বিষয়। এটা তো আমরা আর বলতে পারছি না। আমরা এটা নিশ্চিত করেছি আমাদের ব্যালট কারো হাতে যায়নি। এই বিষয়ে আমরা শতভাগ নিশ্চিত। ব্যালট ছাপানোর ক্ষেত্রে যদি সিকিউরিটির কোনো ঘাটতি হতো, তাহলে তো এটা সবার হাতে হাতে চলে যেতো। আমাদের ছেলে-মেয়েরা স্বাক্ষর করে ব্যালট নিয়ে ভোট দিয়েছে। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নাই। এবং এর বাইরে কোনো কিছু তো আমরা দেখি নাই।"
অভিযোগকারীদের অবস্থান
মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) অভিযোগ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে সাক্ষাৎ করেন ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের আবিদুল ইসলাম, জিএস প্রার্থী তানভীর বারী হামিম, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ-সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদের এবং স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের ভিপি প্রার্থী উমামা ফাতেমা।
বৈঠক শেষে আবিদুল ইসলাম বলেন, "নীলক্ষেত গাউসুল আজমের নিচে ডাকসু নির্বাচনের ব্যালট পেপার পাওয়া গেছে। এ ব্যালট পেপার কে ছাপিয়েছে, কারা এখানে ছিলো—সেটার তদন্ত করে সবার কাছে তুলে ধরা এখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রধান দায়িত্ব।"
"পুরো সিস্টেমকে অবিশ্বাস্য করা যায় না" — নির্বাচন কমিশনার
এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, "এখানে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের ভোটের উপর কোনো প্রভাব পড়েছে কি না? আমাদের ছাত্রছাত্রীরা লাইন ধরে, প্রপার সিকিউরিটি মেনে, পরিচয় নিশ্চিত করে ব্যালট নিয়ে ভোট দিয়েছে—এই বিষয়ে তো কোনো সন্দেহ নাই। এটা ভোটের দিন বা আগের দিনও যদি আমাদের বলতো, তাহলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নিতাম। এখন প্রপারলি ভোট হয়েছে, রেজাল্ট হয়েছে, সবাই রেজাল্ট মেনে নিয়েছে, সবাই আনন্দে আছে।"
তিনি আরও যোগ করেন, "কোথায় কে ছবি দিছে, এটাকে কেন্দ্র করে পুরো সিস্টেমকে অবিশ্বাস্য করা—এটা কি সম্ভব? সবার সামনে বাক্স খুলছে, সবার সামনে সিলগালা হইছে। কোনো ধরনের লুকোচুরি কিছুই ছিলো না।"