হাসিনার পতনের বর্ষপূর্তিতে 'সাদা দলের' বিজয় র্যালি: শহীদদের শ্রদ্ধা, গণতন্ত্রের পথে অঙ্গীকার
প্রকাশিত: ০৫ আগস্ট ২০২৫, ১৫:২০

ফ্যাসিবাদী আওয়ামী শাসনের অবসান এবং স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পলায়নের বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে র্যালি করেছে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষকদের সংগঠন ‘সাদা দল’।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) বেলা ১২টা ৪৫মিনিটে ঢাবি অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে র্যালিটি শুরু করেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। পরে সেটি রাজু ভাস্কর্য ঘুরে ভিসি চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। এর আগে, জুলাই অভ্যুত্থান ও মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুর্ঘটনায় শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। এরপর সাদা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
কর্মসূচিতে বক্তারা স্মরণ করেছেন শহীদদের ত্যাগ, তুলে ধরেছেন আন্দোলনের অর্জন এবং পুনরায় অঙ্গীকার করেছেন একটি বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের নির্মাণের।
এসময় কলা অনুষদের ডিন ছিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, গত বছর এই দিনে ফ্যাসিস্ট সরকারের পেটোয়া বাহিনী ও পুলিশের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কারফিউ ভেঙে দাঁড়িয়েছিলাম। সেদিন ইতিহাসের সাক্ষী হয়েছিলাম। আজকের বর্ষপূর্তিতে আবারো সেই আত্মত্যাগকে স্মরণ করছি।
তিনি আরও বলেন, শহীদদের স্বপ্ন পূরণের অংশ হিসেবেই আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অতীতের মত ভবিষ্যতেও এই অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। আমরা আশা করছি, অচিরেই একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। তারাই ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার পুনরাবৃত্তি রুখে দেবে।
উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ. বি. এম. ওবাইদুল ইসলাম বলেন, গত বছর ৫ আগস্ট দীর্ঘ ১৭ বছরের দুঃশাসনের পর শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকার জনগণের আন্দোলনের মুখে পালাতে বাধ্য হয়েছিল। সেদিন কারফিউ উপেক্ষা করে ছাত্র-জনতা রাজপথে নেমে নতুন ইতিহাস রচনা করেছে। এর পেছনে রয়েছে জুলাই আন্দোলন ও গত ১৬ বছরের শহীদদের রক্ত, নিপীড়ন ও গুম-খুনের ইতিহাস। তাই বিজয়ের দিন হিসেবে উদযাপনের পাশপাশি স্মরণ করছি আন্দোলনের শহীদদের। আমাদের আনন্দের মাঝেই রয়েছে তাদের ত্যাগের ইতিহাস।
তিনি বলেন, ৫ আগস্টের বিজয় ছিল অভ্যন্তরীণ এক ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে, যেখানে সরকার নিজ দেশের জনগণের ওপরই দমন চালিয়েছে। এই নিন্দনীয় দমননীতির দ্রুত বিচার আমরা দাবি করছি। বিচার বিলম্ব মানেই অন্যায়কে উৎসাহ দেওয়া, সমাজে অন্যায়কে স্থায়ী করে তোলা।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ছিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়। এই দিনটিকে আমরা শুধু বিজয় নয়, গণতন্ত্র ও জনগণের শক্তির প্রতীক হিসেবেও স্মরণ করি। জাতীয়তাবাদী আদর্শে উদ্বুদ্ধ ঢাবি শিক্ষকসহ আন্দোলনে যুক্ত সকল সহযোদ্ধাকে অভিনন্দন জানান তিনি।
যখনই বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়বে, তখনই সাদাদল সাধারণ ছাত্র-জনতার পাশে থাকব বলেও মন্তব্য করে অধ্যাপক লুৎফর বলেন, গত বছরের আন্দোলন ছিল বৈষম্যহীন ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণের প্রত্যাশার প্রতিফলন। সেই লক্ষ্যে আমরা ঐক্যবদ্ধ ছিলাম, আছি এবং থাকব।
সাদা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম সরকার বলেন, আগামী দিনে দেশে একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে এই প্রত্যাশা নিয়ে এখানে একত্রিত হয়েছি আমরা। সেই সরকারের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সমগ্র দেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হবে। ফ্যাসিবাদ নির্মূলে দেশের সব শ্রেণিপেশার মানুষ ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা রাখবে, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।”
ঢাবি কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, জুলাইয়ের আন্দোলনে ১৪শ’ শহীদ ও ৩০ হাজার আহতের আত্মত্যাগের বিনিময়ে এই বাংলাদেশ অর্জিত হয়েছে। আমরা শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা রাস্তায় নেমেছিলাম একটি বৈষম্যহীন ও ইনক্লুসিভ বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে। আমরা আশা করছি এখন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ পাবো। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের মালিকানা চলে গিয়েছিল অল্প কয়েকজন মানুষের হাতে। ফলে মুক্তিযুদ্ধের মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হয়নি। আমরা চাই, ২০২৪ সালের আন্দোলনেও যেন একই ঘটনা পুনরাবৃত্তি না হয়।
সাদা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুস সালাম বলেন, গত ১৬-১৭ বছর ধরে দেশকে জিম্মি করে রেখেছিল স্বৈরাচার হাসিনা সরকার। এই সময়ের মধ্যে অসংখ্য জীবন ধ্বংস করেছে। বিশেষ করে গত বছরের জুলাই-আগস্টে শত শত মানুষকে হত্যা করেছে। হেলিকপ্টার থেকে শিশুদের ওপর গুলি চালানো হয়েছে। এই দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে মানুষ জীবন বাজি রেখে রাস্তায় নেমেছিল, শুধু বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা গড়ার জন্য।
ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিচারের বিষয়ে তিনি বলেন, দেশের দু-এক জায়গায় বিচারের কিছু উদ্যোগ আছে, তবে এখনো অনেক জায়গায় তা হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের পেটোয়া বাহিনী ও দোসর শিক্ষকদের এখন পর্যন্ত বিচারের আওতায় আনা হয়নি বলেও অভিযোগ করেন।
তিনি দাবি করেন, অবিলম্বে যারা ফ্যাসিবাদীদের হাতকে শক্তিশালী করার কাজ করেছে, তাদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। যারা দেশের বাইরে পালিয়ে আছে, তাদের ফিরিয়ে এনে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
টিডিডি/ এএইচআর