যুবদল নেতার আশ্রয়ে শেকৃবির হলে থাকছেন ছাত্রলীগ নেতা পিয়াল
প্রকাশিত: ০১ আগস্ট ২০২৫, ১৭:০৬

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের তিন জন সাবেক ও বর্তমান নেতাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল থেকে আটক করে পুলিশ। তাছাড়া ক্যাম্পাসের ছাত্র নেতাদের সহযোগিতা নিয়ে এসব নেতারা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে অবস্থান করছেন বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সূত্র এবং আটক হওয়া ছাত্রলীগ নেতার জবানবন্দিতে জানা যায়।
মূলত গতবছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে পতিত আওয়ামীলীগের সরকার পতনের পর বাংলাদেশে আবারো অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আওয়ামীলীগ। এ অবস্থায় নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ বেশ কিছুদিন যাবত গুপ্ত নাশকতার পরিকল্পনা করছে। তারই ধারাবাহিকতায় শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি) ছাত্রলীগের নেতা পরশের নেতৃত্বে একটি গুপ্ত পরিকল্পনার ছক ফাঁস হলে গত বুধবার (৩০ জুলাই) রাতে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক তিন নেতাকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সহায়তায় পুলিশ আটক করে নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা শরিফ জানান, আগস্ট মাসকে ঘিরে দেশব্যাপী অরাজকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ছাত্রলীগ ও ফ্যাসিস্টদের কিছু নেতা-কর্মী নিয়মিত জুম মিটিং করছে। পলাতক অনেকে ক্যাম্পাসসংলগ্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে উঠেছে এবং হলে অবস্থানকারী ছাত্রলীগ কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকেন্ড গেটের চায়ের দোকানে নিয়মিত আড্ডা দেয় এবং ঢাকায় কোনো গোপন কর্মসূচি থাকলে হলে এসে অবস্থান করে। আমরা কয়েকদিন তাদের পর্যবেক্ষণ করি এবং বিভিন্নভাবে তথ্য সংগ্রহের মধ্যে দিয়ে নিশ্চিত হই যে তারা একত্রিত হচ্ছে এবং কিছু একটা করার পরিকল্পনা করছে। এরপর সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের রুমে যাই এবং প্রক্টরকে ফোন করি, কিন্তু তিনি আসতে রাজি হননি। পরে বিষয়টি থানা পুলিশকে জানানো হয় এবং সন্দেহভাজনদের পুলিশের জিম্মায় দেওয়া হয়।
আওয়ামী কৃষিবিদদের নেতা ও আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এসব শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ রাখছেন এবং ক্যাম্পাসসহ আশপাশের পরিবেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে তাদের কাছ থেকে খোঁজ খবর নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন ছাত্রদল নেতা।
আটক হওয়া উক্ত ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ হলেন মীর আসাদ আল রহমান সায়েম, তৌফিক ই মওলা ও আল সাদি পিয়াল। তবে পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে জানা যায় আটক হওয়া তিনজন ছাত্রলীগ নেতার মধ্যে আল সাদি পিয়ালকে অদৃশ্য কারনে পুলিশ ছেড়ে দেয়। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের এই পিয়ালকে ছাড়াতে কে তদবির করেছে সেটি বড় প্রশ্ন শিক্ষার্থীদের মনে। বিষিয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এবিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রদল নেতা বলেন, মূলত ক্যাম্পাসের সাবেক শিক্ষার্থী এবং যুবদল নেতা সানোয়ারের নিজ এলাকার লোক পিয়াল হওয়ায় তাকে ক্যাম্পাসে থাকার সুযোগ করে দেন। এছাড়া পুলিশের নিকট থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রেও সেই সহযোগিতা করছে। এর পূর্বে কৌশিক নামের একজন ছাত্রলীগ নেওয়ার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিতে গেলে সে বাধা প্রধান করেন।
আল সাদি পিয়াল ছাড়া পাওয়ার বিষয়ে শেকৃবি ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির বলেন, আমরাও ছাত্রলীগ নেতা ছাড়া পাওয়ার সঙ্গে যুবদল নেতা সানোয়ার ভাইয়ের সহযোগিতার গুঞ্জন শুনেছি, যা আমাদের কাছে অসত্য মনে হয়েছে। তবে সত্য হলে এটা করা ঠিক হয়নি বলেই আমাদের মত। কেননা সানোয়ার ভাই নিজেও দুঃসময়ের কর্মী, তিনি কোনো ছাত্রলীগ কর্মীকে আশ্রয় দিবেন তা মেনে নেওয়া যায় না। তবে আমি ছাত্রলীগ নেতা ছাড়া পাওয়ার মূল দায় পুলিশকেই দিতে চাই।
আটকের পরে ছাড়া পাওয়া ছাত্রলীগ নেতা আল সাদি পিয়াল যুবদল নেতা কৃষিবিদ সানোয়ারের সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে দীর্ঘ সময় ধরে অবস্থান করছিল বলে তার জবানবন্দিতে জানা যায়।
পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার সময়ে উপস্থিত ছাত্রদল নেতা শরিফ বলেন, আমরা মূলত তিনজনকে পুলিশের হাতে সোফর্দ করলেও পরবর্তীতে দুইজনকে আটক দেখানো হয়েছে। কীভাবে একজন ছাড়া পেল তা আমরা অবগত নই।

এবিষয়ে যুবদল নেতা সানোয়ার বলেন, আমার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র হচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে। আমার সাথে কোনো যোগসূত্র নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা পিয়ালের থাকার কথা নয়, সেখানে পুলিশের নিকট হতে ছাড়ানোর কথা তো দূরের বিষয়। এছাড়া ছাত্রলীগ নেতা পিয়ালের আমার বিরুদ্ধে যে জবানবন্দির ভিডিও এসেছে তা জোরপূর্বক কিংবা যড়যন্ত্রমূলক ভাবে হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত সত্য বের হবে।
এ বিষয়ে শেরেবাংলা নগর থানার ওসি ইমামউল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ছাত্রলীগের পোস্টধারী দুইজন নেতাকে শেকৃবি ক্যাম্পসের ছাত্রদল নেতা এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা আমাদের হাতে তুলে দেয়। তদের বিরুদ্ধে মূলত বিভিন্ন ঝটিকা মিছিল এবং অপতৎপরতার অভিযোগ রয়েছে যা বতমানে তদন্তাদীন অবস্থায় রয়েছে।
টিডিডি/ এএইচআর