জোরপূর্বক স্বীকারোক্তিতে মৃত্যুদণ্ডের অভিযোগ, সাইমন মামলার পুনঃতদন্ত চায় শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা

প্রকাশিত: ১৩ জুলাই ২০২৫, ২০:৪৭

Thumbnail
ছবি: মানববন্ধনে শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা।

অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মুজাম্মিল হুসাইন সাইমনের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, জোরপূর্বক আদায়কৃত স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে তাকে ফাঁসির রায় দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা মামলার পুনঃতদন্ত করার দাবি জানান।

রবিবার (১৩ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বর এলাকায় মানববন্ধন করে শিক্ষার্থীরা। এসময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল মুমিন ও বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। 

জানা যায়, সাইমন শাবিপ্রবির কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসসি) বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি ঢাকার একটি ওয়েব ডিজাইন প্রতিষ্ঠানে প্রোগ্রামার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০২১ সালে অভিজিৎ হত্যা মামলায় রায়ে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকার বাউনিয়া থেকে সাইমনের স্ত্রী ও শিশু সন্তানের সামনে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) তাকে অপহরণ করে। পরে তাকে 'ব্লগার হত্যা' মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। তাকে কখনো আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, কখনো হিজবুত তাহরির, কখনো শিবিরের কর্মী ট্যাগ দেওয়া হতো।  

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এ মামলায় কোনো প্রকৃত ও নিরপেক্ষ তদন্ত হয়নি বরং একটি সাজানো নাটকের মতোই তাকে জড়িয়ে ফাঁসানো হয়েছে। একজন মেধাবী ছাত্রকে শুধু ধর্ম চর্চা করার কারণে জঙ্গি তকমা দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে। এটি মানবতাবিরোধী অপরাধ। 

সাইমনের ভাই আব্দুল্লাহ আল হোসাইন জানান, জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য তাকে গ্রিলে ঝুলিয়ে রাখা হয়, ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়, জয়েন্টে আঘাত করা হয় এবং ঠান্ডা পানিতে ডুবিয়ে রাখা হয়। তিনি স্বীকারোক্তিতে সই করতে অস্বীকার করলে তার বাবা ও ভাইকে গুমের হুমকি দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে নিরুপায় হয়ে তিনি সিটিটিসির লিখিত স্বীকারোক্তিতে সই করতে বাধ্য হন। এই স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে ২০২১ সালে আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ করেন তার ভাই।

মানববন্ধনে সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী আজাদ শিকদার বলেন,  মোজাম্মিল হুসাইন সাইমন আজ দীর্ঘ ৮ বছর ধরে জেলে। তার বিরুদ্ধে কোনো তথ্য প্রমাণ নেই। শুধু একটি জোরপূর্বক আদায়কৃত স্বীকারোক্তির উপর ভিত্তি করে তাকে ফাঁসির রায় দেওয়া হয়েছে। ‎একজন মানুষকে এমনভাবে বন্দি করে রাখা, তার উপর অমানবিক নির্যাতন চালানো, পরিবারকে গুমের হুমকি দেওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধ। ‎আমরা অতিদ্রুত তার মামলার পুনঃতদন্ত করার জোর দাবি জানাচ্ছি। 

অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল মুমিন বলেন, শিক্ষার্থী হিসেবে থাকে বিভাগে দীর্ঘদিন পেয়েছি। সে অত্যন্ত মেধাবী এবং ভালো প্রোগ্রামার ছিল। তার অপরাধ সে একজন ভালো প্রেকটিসিং মুসলিম। হাসিনার বাহিনী এটা সহ্য করতে পারেনি। তাই থাকে জঙ্গি নাটক সাজিয়ে বছরের পর বছরের নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা চাই এই ঘটনার পুনঃতদন্ত হোক। জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধ।

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে বের হওয়ার পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেট পার হওয়ার সময় পেছন থেকে অতর্কিত হামলার শিকার হন ব্লগার অভিজিৎ রায়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ সময় তার সঙ্গে থাকা স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাও গুরুতর আহত হন। এই হত্যাণ্ডের অভিযোগে ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তাকে গ্রেফতার করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিসিসি) ইউনিট।