'বিএনপি এখন বাম ও ভারতঘেঁষা রাজনীতির পথে' বলে আলীকদম উপজেলা ছাত্রদল নেতার পদত্যাগ

প্রকাশিত: ১২ জুলাই ২০২৫, ২২:০২

Thumbnail
ছবি: মোহাম্মদ রাশেদ

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের আলীকদম উপজেলা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ রাশেদ ছাত্রদলের সব ধরনের কার্যক্রম থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি, গভীর আবেগ ও বিবেচনার সাথে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিচ্ছি।

শনিবার (১৩ জুলাই) এক বিবৃতির মাধ্যমে তিনি এই পদত্যাগপত্র প্রকাশ করেন। দীর্ঘ বিবৃতিতে তিনি বিএনপির আদর্শিক অবস্থান থেকে সরে যাওয়া, ইসলামপন্থী রাজনীতির প্রতি অবজ্ঞা, এবং সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহিংসতায় দলটির ভূমিকা নিয়ে গভীর হতাশা প্রকাশ করেছেন।

২০১৭ সাল থেকে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা রাশেদ উল্লেখ করেন, ২০২০ সালে গঠিত ছাত্রদলের আলীকদম উপজেলা আহ্বায়ক কমিটিতে তিনি যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিএনপি, জামায়াত, হেফাজত, ইসলামী আন্দোলন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন ইসলামপন্থী ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষে তিনি সবসময়ই কথা বলেছেন এবং স্বাধীন ও মূল্যবোধসম্পন্ন রাজনীতির চেষ্টা করেছেন বলে দাবি করেন।

রাশেদ অভিযোগ করেন, ৫ আগস্টের ঘটনার পর থেকে বিএনপির নেতৃত্ব বামঘেঁষা চিন্তা ও মতাদর্শে ধাবিত হচ্ছে। অতীতে যারা ইসলামী চিন্তাবিদ ও ইসলামপন্থী দল হিসেবে বিএনপির পাশে ছিলেন, এখন তাদের বিরুদ্ধেই কথা বলা হচ্ছে, যা আশ্চর্যজনকভাবে আওয়ামী লীগের বক্তব্যের সঙ্গে মিলে যায়।

তিনি বলেন, একজন ইসলামপন্থী ডানপন্থী রাজনীতিক হিসেবে বুঝতে পারছি, আমার মতো মাইন্ডসেটের কারো বিএনপিতে ঠাঁই হবে না। পাশাপাশি তিনি দলের ভেতরে ক্রমবর্ধমান সহিংসতা, চাঁদাবাজি ও রাজনৈতিক নাটকের বিরুদ্ধেও স্পষ্ট অবস্থান নেন।

রাশেদ লিখেছেন, আমি পাথর দিয়ে মানুষ হত্যা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজিকে ন্যূনতম সমর্থন দিতেও রাজি নই। আমি দলীয় স্বার্থ নয়—দেশ, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাধারণ মানুষের অধিকারের পক্ষেই রাজনীতি করতে চাই।

 

Media Image ছবি: মোহাম্মদ রাশেদের ফেসবুক পোস্ট

তিনি দাবি করেন, বিএনপিতে এখন এমন সব নেতার প্রভাব, যারা বাস্তবতা মানতে নারাজ এবং শেখ হাসিনার দেখানো পথেই হেঁটে চলেছেন। আমি কখনো বিএনপির প্রতি সহানুভূতিশীল একজন আওয়ামী লীগার দেখিনি। এখন বিএনপির প্রতি সহানুভূতিশীল অসংখ্য আওয়ামী লীগার দেখতে পাচ্ছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।

রাশেদ তাঁর বিবৃতিতে শহীদ জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, 'জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার বিএনপি এখন আর খুঁজে পাচ্ছি না।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, খালেদা জিয়ার বেঁচে থাকা অবস্থায় বিএনপি ছেড়ে যাবেন না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে ক্ষমা চেয়ে সেই প্রতিশ্রুতি ভাঙতে বাধ্য হচ্ছেন।

তিনি দাবি করেন, ১৯৭৮ সালের ইসলামিক মাইন্ড নিয়ে গঠিত বিএনপিতে এখন যত বেশি ভারত ঘেঁষা, বামপন্থী চিন্তা করা যাবে— ততই গ্রহণযোগ্যতা পাওয়া যায়।

রাশেদ বলেন, আমার কোনো নাম জামায়াত-শিবিরে নেই, কিন্তু তাদের আদর্শ আমাকে মুগ্ধ করে। আওয়ামী আমলে জামায়াত-শিবির ট্যাগ দেওয়া হয়েছে, এখন বিএনপিও একই কাজ করছে।

সবশেষে তিনি ঘোষণা দেন, আজ থেকে আমি আর কোনো দলীয় পরিচয়ে নই, বরং একজন স্বাধীনচেতা দেশপ্রেমিক মানুষ হিসেবে ভালোকে ভালো, মন্দকে মন্দ বলার সাহস নিয়ে পথ চলতে চাই।”

তিনি তাঁর বন্ধু, সহযোদ্ধা ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করে জানান, রাজনৈতিক নয়, সামাজিক যোগাযোগ থাকবে সবার সঙ্গে।