চাকসুতে ১৫দফা ইশতেহার স্বতন্ত্র এজিএস প্রার্থী শিপনের
প্রকাশিত: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯:১৯

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে প্রশাসনিক কার্যক্রমের পূর্ণাঙ্গ ডিজিটালাইজেশনসহ মোট ১৫দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছেন স্বতন্ত্র এজিএস প্রার্থী সাখাওয়াত হোসাইন শিপন।
রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) চাকসু ভবনের সামনে দুপুর আড়ায়টাই এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ ১৫ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেন তিনি।
তার ১৫ দফা ইশতেহারের মধ্যে রয়েছে-
পরিবহন ও অভ্যন্তরীণ যাতায়াত:
জিরো পয়েন্ট থেকে নতুন ব্রিজ, আগ্রাবাদ, একে খানসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও পার্শ্ববর্তী উপজেলায় পাবলিক ও প্রাইভেট সমন্বয় করে পর্যাপ্ত বাস চলাচল নিশ্চিত করা হবে। ক্যাম্পাসের ভেতরে ই-কারের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে এবং রিকশা-সিএনজি সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে ফ্রি বা স্বল্প ভাড়ায় চক্রাকারে বাস চালু করা হবে।
২. শাটল সমস্যা নিরসন:
শিক্ষার্থীদের নির্বিঘ্ন যাতায়াত নিশ্চিত করতে শাটলের বগি বৃদ্ধি ও রেললাইনকে দুই লাইনে উন্নীত করা হবে। রেলস্টেশন সম্প্রসারণ, বহিরাগতমুক্তকরণ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ শাটল নিশ্চিত করা হবে। পাশাপাশি শিডিউল বিপর্যয় দূর করে প্রতিটি বগিতে পর্যাপ্ত লাইট ও ফ্যানের ব্যবস্থা করা হবে।
৩. আবাসন সংকট নিরসন:
প্রাথমিকভাবে পর্যাপ্ত টিনশেডের ডর্মিটরি নির্মাণ ও প্রশাসনকে আবাসন ভাতা প্রদানের জন্য জোর দাবি জানানো হবে। দীর্ঘমেয়াদে প্রতি অর্থবছরে অন্তত দুটি নতুন হল নির্মাণের মাধ্যমে ধাপে ধাপে পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা হবে। সিট বণ্টনে মেধার পাশাপাশি শিক্ষার্থীর দূরত্ব ও আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
৪. খাদ্য সংকট সমাধান:
আবাসিক ও অনাবাসিক উভয় শিক্ষার্থীর জন্য ডাইনিং চালু করা হবে। পাশাপাশি প্রতি হলে ক্যান্টিন চালু করে যেকোনো সময়ে শিক্ষার্থীদের জন্য মানসম্মত খাবারের অধিকার নিশ্চিত করা হবে। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিবেচনায় ক্যাম্পাস ও বিভাগ-সংলগ্ন হোটেল-ক্যান্টিনে মানসম্মত ও সাশ্রয়ী দামে নিরাপদ খাবারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের সহায়তায় মনিটরিং সেল গঠন করা হবে। শিক্ষার্থীদের মতামত নিয়ে প্রতিটি হলে আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য মেস চালু করা হবে।
৫. প্রশাসনিক কার্যক্রম ডিজিটালাইজেশন:
ভর্তি, ফর্ম ফিল-আপ, অর্থপ্রদান, সার্টিফিকেট উত্তোলনসহ সকল অফিসিয়াল কার্যক্রম অনলাইনে সহজ, দ্রুত ও স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন করার জন্য আইটি বিশেষজ্ঞ টিমের সহায়তায় কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। দ্রুত সময়ে ফলাফল প্রকাশ, রেজিস্ট্রেশন ফি, রশিদ ইস্যু ইত্যাদিও সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড করা হবে।
৬. লাইব্রেরি, রিডিং রুম ও ল্যাব আধুনিকায়ন:
কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি সংস্কারের অংশ হিসেবে ব্যক্তিগত বই নিয়ে প্রবেশের সুযোগ, সহজে বই খুঁজতে মোবাইল অ্যাপ তৈরি, হল লাইব্রেরি ও রিডিং রুম সংস্কার করে শিক্ষার্থীদের জন্য আধুনিক ও অনুকূল পড়াশোনার পরিবেশ নিশ্চিত করার কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পাশাপাশি ল্যাব সংস্কার, আধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ, বইয়ের সংখ্যা ও বৈচিত্র্য বৃদ্ধি করে গবেষণা ও উচ্চশিক্ষার সুযোগ সমৃদ্ধ করা হবে।
৭. শিক্ষার মানোন্নয়ন ও গবেষণা বাজেট বৃদ্ধি:
শিক্ষার মানোন্নয়ন ও গবেষণার বাজেট বৃদ্ধি করতে প্রশাসনের কাছে যৌক্তিক কারণ তুলে ধরা হবে। সেশনজটমুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে যথাসময়ে ক্লাস ও পরীক্ষা গ্রহণ এবং দ্রুত ফলাফল প্রকাশের জন্য প্রশাসনিকভাবে যাবতীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জোর দাবি জানানো হবে। পাশাপাশি শিক্ষকদের কর্মদক্ষতা মূল্যায়নে আধুনিক টিচার্স ইফিশিয়েন্সি রেটিং সিস্টেম চালু করা হবে।
৮. নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতকরণ:
দলমত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল শিক্ষার্থী শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ে তোলা হবে। বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
৯. মেডিকেল সেন্টার সংস্কার ও আধুনিকায়ন:
চবি মেডিকেল কেল সেন্টার আধুনিকায়ন, প্রয়োজনীয় ল্যাব স্থাপন ও পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। প্রতিটি হলে মেডিকেল কর্নার স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন কর্তৃক উন্নত মানের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেদের সাথে Mou এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের চিকিৎসায় বিশেষ ছাড় ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেবা নিশ্চিত করা হবে।
১০. চাকসু ও সমাবর্তনকে নিয়মিত ক্যালেন্ডারে অন্তর্ভুক্তকরণ:
আয়োজনের লক্ষ্যে চাকসুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য সমাবর্তন আয়োজনের জন্য ক্যালেন্ডারে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এবং গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন। প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানানো হবে।
১১. অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্য বন্ধ:
বিশ্ববিদ্যালয়ে অবৈধ নিয়োগ বন্ধ করে দলীয়। দলীয় প্রভাবমুক্ত ও মেধাভিত্তিক নিয়োগ নিশ্চিত করা হবে।
১২. নারী শিক্ষার্থীদের কল্যাণ:
প্রতিটি ফ্যাকাল্টিতে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য কমনরুম, নামাজের স্থান, মা শিক্ষার্থীদের জন্য ব্রেস্টফিডিং রুম এবং স্বাস্থ্যসম্মত ওয়াশরুম ও স্যানিটেশন নিশ্চিত করা হবে।
১৩. খেলাধুলা ও বিনোদন:
শিক্ষার্থীদের জন্য কেন্দ্রীয় ও প্রতিটি হলে সুইমিংপুল নির্মাণ, জিমনেশিয়াম আধুনিকায়ন এবং কেন্দ্রীয় ও প্রতিটি হলের মাঠ সংস্কার করে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হবে। ফুটবল, ক্রিকেটসহ বিভিন্ন খেলায় শিক্ষার্থীদের জাতীয় মানের খেলোয়াড় হিসেবে গড়ে তোলার ব্যবস্থা করা হবে।
১৪. হলভিত্তিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা:
প্রতিটি হলে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রতিষ্ঠা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বরাদ্দ নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
১৫. শিক্ষার্থীদের অধিকার ও দাবি আদায়ে অবিচল অবস্থান:
শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি ও অধিকার আদায়ে সর্বদা তাদের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের হয়ে কাজ করাই আমার অন্যতম প্রধান অঙ্গীকার।
ইশতেহার ঘোষণার সময় তিনি বলেন, “চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি আধুনিক, নিরাপদ ও শিক্ষাবান্ধব ক্যাম্পাসে রূপান্তরিত করতে আমি নিরলসভাবে কাজ করে যাবো।”
টিডিডি/এসআর