নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতে ব্যর্থতার অভিযোগ, উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ চায় ঢাবি ছাত্রদল
প্রকাশিত: ৩১ মে ২০২৫, ১৫:৩১

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
শনিবার (৩১ মে) দুপুর ১টার দিকে মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়। সম্মেলনে ছাত্রদল নেতা শহীদ সাম্যর হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি এবং সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়েও আলোচনা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, “শহীদ সাম্য হত্যার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছিল অত্যন্ত হতাশাজনক। ঘটনার স্থানটি ভোর পর্যন্ত অরক্ষিত রাখা হয়, রমনা কালী মন্দির, বাংলা একাডেমি ও তার আশেপাশের কোন সিসিটিভি ফুটেজ না পাওয়ার মতন অস্বাভাবিক বিষয়াবলি ঘটনাটিকে আরো সন্দেহজনক করে তোলে।
তিনি আরও দাবি করেন, একটি অনলাইন প্রতিবেদনে একজন প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্যমতে, ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা হামলাকারীদের ধরার পরিবর্তে উল্টো তাদের পালাতে উৎসাহিত করে। অথচ এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা পুলিশ বিভাগ সে সময়কার পুলিশ সদস্যদের ভূমিকা বা তাদের আচরণের ব্যাখ্যা দিতে পারেনি। হামলাকারীদের পালিয়ে যেতে সহায়তা করার অভিযোগ এই হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে সন্দেহ আরও গভীর করেছে।
ডিএমপির সংবাদ সম্মেলননের সমালোচনা করে তিনি বলেন, হত্যার প্রায় দুই সপ্তাহ পর ডিএমপি যে তথ্য প্রকাশ করে, তা ছিল অস্পষ্ট ও বিভ্রান্তিকর। বলা হয়, সাম্য একটি টেজার গানকে কেন্দ্র করে খুন হন, অথচ চিকিৎসকদের মতে তার উরুতে ছুরিকাঘাতে ‘ফেমোরাল আর্টারি’ নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ ধমনী কেটে দেয়া হয়, যার ফলে মাত্র দুই-তিন মিনিটের মধ্যেই অত্যধিক রক্তক্ষরণে মৃত্যুমুখে পতিত হয় সে। ঢাবি শিক্ষার্থী এবং সুপরিচিত ছাত্রদল নেতাকে এমন একটি তুচ্ছ বিষয়ে আক্রমণ করে অতি পেশাদার উপায়ে হত্যা করার পেছনে অন্য কোন ষড়যন্ত্র আছে নাকি নেই- সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কোন তথ্য জানাতে ব্যর্থ হয়েছেন ডিএমপি কর্তৃপক্ষ।
ঢাবি ছাত্রদল সভাপতি অভিযোগ করেন, “আবাসিক হলগুলোতে ছাত্রলীগের দখলদারিত্ব ও সহিংস আচরণ অব্যাহত রয়েছে। প্রশাসন লুকিয়ে থাকা ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে অনীহা ও গাফিলতি প্রদর্শন করেছে এসব বিষয় চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। বরং প্রশাসনিক কাঠামোর পাশাপাশি আবাসিক হলসমূহেও আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসরদের ক্ষমতায়ন করা হচ্ছে, চিহ্নিত করে বেকায়দায় ফেলা হচ্ছে বিগত সময়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সাথে বিভিন্নভাবে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারিদের। ফ্যাসিবাদী শক্তির জয় বাংলা স্লোগান দেয়া হচ্ছে আবাসিক হল সমূহে, দেয়ালে বিরাটাকারে লেখা হচ্ছে সেই ঘৃণ্য খুনিদের দলীয় স্লোগান।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিরাপদ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা একটি ক্যাম্পাস চায়। কিন্তু প্রশাসনের গাফিলতির কারণে তা নিশ্চিত হয়নি। বারবার ঘটে যাওয়া ঘটনা এবং প্রশাসনের নির্লিপ্ত মনোভাব তাদের ব্যর্থতাকে সামনে এনেছে।
উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করে তিনি বলেন, এই প্রশাসন নিরাপদ ও স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের উপযুক্ত ক্যাম্পাসের আকাঙ্ক্ষা রক্ষা করতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের গা-ছাড়া মনোভাবের মাধ্যমে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তাবিধানে তাদের অযোগ্যতারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। তাই আমরা আবারও জোরালোভাবে দাবি জানাই, উপাচার্য ও প্রক্টর পদত্যাগ করুন এবং নতুন নেতৃত্বের মাধ্যমে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে নিরাপদ শিক্ষাঙ্গন হিসেবে গড়ে তুলুন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন, সিনিয়র সহসভাপতি মাসুম বিল্লাহ, সহসভাপতি আনিসুর রহমান খন্দকার অনিক, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক নাসির উদ্দিন শাওন, সাংগঠনিক সম্পাদক নূর আলম ভূঁইয়া ইমনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।