কবি হাফিজের জন্মের সাত শতক পূর্তি:

ইউনেস্কো হাউজে নজরুলকে নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ঢাবি শিক্ষক ড. মুমিত

প্রকাশিত: ০৮ জুন ২০২৫, ২২:১৫

Thumbnail
ছবি: ড. মুমিত আল রশিদ

পারস্যের কিংবদন্তি কবি হাফিজ শিরাজীর জন্মের সাত শতাব্দী পূর্তি উপলক্ষে ইউনেস্কোর আয়োজনে ফ্রান্সের প্যারিসে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সাইন্টিফিক ও সাহিত্যিক কনফারেন্স। ইউনেস্কো হাউসে আগামী ১১ জুন থেকে ১৩ জুন ২০২৫ পর্যন্ত চলবে এই সম্মেলন, যেখানে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে সাহিত্যিক, গবেষক ও অনুবাদকরা অংশ নেবেন।

ইউনেস্কো, রুদাকি অ্যাসোসিয়েশন অফ প্যারিস এবং তাজিকিস্তান সরকারের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হবে এই সম্মেলন। এতে বাংলাদেশ থেকে আমন্ত্রণ পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ড. মুমিত আল রশিদ। ইউনেস্কো রিপ্রেজেনটেটিভ অব তাজিকিস্তান হিসেবে তাঁকে বিশেষ অতিথি সম্মাননায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আগামীকাল সকালে ফ্রান্সের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করবেন তিনি।

সম্মেলনে ড. মুমিত ‘বিশ্ব সাহিত্যে সুর ও আত্মার মেলবন্ধনে হাফিজ শিরাজী ও কাজী নজরুল ইসলাম : একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন, যা মূল ফারসি ভাষায় লেখা। এই প্রবন্ধটি সম্মেলনের জন্য নির্বাচিত ৮০টি গবেষণাপত্রের মধ্যে অন্যতম।

প্রবন্ধে তিনি হাফিজ শিরাজীর আত্মিক ও সংগীতধর্মী কাব্যচিন্তার সঙ্গে বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের আধ্যাত্মিক সংযোগের দিকটি আলোকপাত করবেন। এই আলোচনা বাংলা ও পারস্য সাহিত্যের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও ভাবগম্ভীর ঐতিহ্যগত সেতুবন্ধনেরও এক গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত।

ড. মুমিত আল রশিদ বলেন, হাফিজ শিরাজীর জন্মোৎসব উপলক্ষে আয়োজকেরা বিভিন্ন দেশ থেকে গবেষণা প্রবন্ধ আহ্বান করেছিলেন। আমি আমার প্রবন্ধে পারস্যের কবি হাফিজ শিরাজী ও আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মধ্যকার সাহিত্যিক মেলবন্ধন ও আত্মিক সংযোগ তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। বিশেষ করে নজরুলের কবিতায় হাফিজের প্রভাব স্পষ্টভাবে অনুধাবনযোগ্য। তিনি হাফিজের দীওয়ান এবং ওমর খৈয়ামের রুবাইয়াৎ অনুবাদ করেছিলেন। আমি নজরুলের প্রায় ২০টি কবিতা বিশ্লেষণ করে তাঁদের কাব্যিক সুর, ভাব ও আত্মিক সংযোগের দিকগুলো তুলে ধরেছি।

তিনি আরও জানান, গত সপ্তাহেই আয়োজকদের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণপত্র পেয়েছি। আমি আগামীকাল সকালে ফ্রান্সের উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছি। ১১ জুন সম্মেলনের একটি সেশন পরিচালনার দায়িত্বও আমাকে দেওয়া হয়েছে।

বাংলা সাহিত্যকে আন্তর্জাতিক পরিসরে তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে ড. মুমিত বলেন, আমাদের দেশে অসংখ্য গুণী কবি ও সাহিত্যিক আছেন। কিন্তু আমরা ভাষাকেন্দ্রিক গবেষণা ও অনুবাদের দিকে খুব একটা মনোযোগ দিই না। আমরা চেষ্টা করলে জীবনানন্দ দাশ, আল মাহমুদ, ফররুখ আহমদকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে পারি৷

এর আগেও ড. মুমিত আন্তর্জাতিক নানা মঞ্চে অংশ নিয়েছেন। সম্প্রতি তিনি ৮-১০ মে চীনের সাংহাই, ইংল্যান্ডের বাথ ইউনিভার্সিটি ও আজারবাইজানের খাজার ইউনিভার্সিটি আয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নেন। সেখানে তিনি ‘পঞ্চতন্ত্র’-এর পাহলভি, আরবি ও ফারসি অনুবাদসমূহ নিয়ে বিশ্লেষণমূলক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

এছাড়া তিনি স্পেন, ইরান, তাজিকিস্তান ও আজারবাইজানে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন সাহিত্য ও ভাষাবিষয়ক সেমিনারে সফলভাবে গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেছেন।

ড. মুমিত আল রশিদের এখন পর্যন্ত প্রকাশিত প্রবন্ধের সংখ্যা ২৩ এবং প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৭টি।