স্কুল থেকেই সিপিআর শেখা বাধ্যতামূলক করার দাবি

প্রকাশিত: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯:১৮

Thumbnail
ছবি: সংগৃহীত
দেশে হৃদ্‌যন্ত্র হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়া বা কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে মৃত্যুর হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, এ ধরনের ঘটনায় রোগীর জীবন বাঁচাতে প্রথম পাঁচ মিনিট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আশপাশের কেউ যদি সঙ্গে সঙ্গে সিপিআর (কার্ডিও পালমোনারি রিসাসিটেশন) দিতে পারেন, তাহলে মৃত্যুর ঝুঁকি অনেকাংশে কমে আসে। তাই সাধারণ মানুষকে জরুরি মুহূর্তে ‘প্রথম পাঁচ মিনিটের ডাক্তার’ হয়ে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
 
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে বিশ্ব হার্ট দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে হৃদরোগ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মহসীন আহমেদ এ বিষয়ে বক্তব্য দেন। 
 
তিনি সম্প্রতি দুইজন পোলিং অফিসারের আকস্মিক কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে মৃত্যুর প্রসঙ্গ টেনে বলেন, আশপাশে সহকর্মীরা থাকলেও কেউ সিপিআর দিতে জানতেন না। এ প্রসঙ্গে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, হার্ট অ্যাটাক ধীরে ধীরে শরীরকে সংকেত দেয়, ফলে রোগী হাসপাতালে যাওয়ার সময় পান। কিন্তু কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বিদ্যুতের মতো হঠাৎ ঘটে যায়—হার্ট থেমে যায়, পালস থাকে না, শ্বাস থাকে না এবং মাত্র নয় থেকে দশ মিনিটের মধ্যে মস্তিষ্কে স্থায়ী ক্ষতি হয়। পৃথিবীতে এমন কোনো রোগ নেই যা এত দ্রুত প্রাণ কেড়ে নেয়। তাই সঙ্গে সঙ্গে সিপিআর শুরু করা ছাড়া বিকল্প নেই।
 
অধ্যাপক মহসীন অনুষ্ঠানে ‘চেইন অব সারভাইভাল’ ধারণা ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, রোগীকে শনাক্ত করে সাহায্য চাইতে হবে, এরপর কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট নিশ্চিত হলে অবিলম্বে সিপিআর শুরু করতে হবে। অন্তত ৩০ মিনিট ধরে সিপিআর চালিয়ে যাওয়া বা অ্যাম্বুলেন্সে রোগীকে হাসপাতালে নেওয়া প্রয়োজন। হাসপাতালে পৌঁছে উন্নত চিকিৎসা শুরু করাই চূড়ান্ত ধাপ। তার ভাষায়, সিপিআর মানে হলো হার্টের পাম্পিং কাজ হাতে করে দেওয়া—চাপ দেওয়া ও ছেড়ে দেওয়ার মাধ্যমে রক্ত সঞ্চালন সচল রাখা।
 
তার মতে, সাধারণ মানুষ সিপিআর সম্পর্কে অজ্ঞ থাকার দায় চিকিৎসকদেরই নিতে হবে। “আমরা জনগণকে জানাতে ব্যর্থ হয়েছি,” উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখনই সিপিআর শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে হবে। এজন্য স্কুল পাঠ্যক্রমে বিষয়টি যুক্ত করার প্রয়োজনীয়তার কথাও তিনি তুলে ধরেন। নবম শ্রেণির বইয়ে এ বিষয়ে দুই পৃষ্ঠা সংযোজনের উদ্যোগ নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন বলেও জানান তিনি। তার বিশ্বাস, পাঠ্যবইয়ে বিষয়টি যুক্ত হলে নতুন প্রজন্ম আরও সচেতন ও দক্ষ হয়ে উঠবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, বিদেশের মতো আমাদের দেশেও যদি স্কুলে স্কুলে সিপিআর শেখানো যায়, তাহলে বিশাল পরিবর্তন আসবে।
 
অধ্যাপক মহসীন বলেন, কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট পৃথিবীর একমাত্র রোগ, যা পাঁচ মিনিটের মধ্যে প্রাণ কেড়ে নেয়। সেই সময়টা আসলে আশপাশের মানুষের হাতে থাকে। তখন স্বামী, স্ত্রী, সন্তান কিংবা সহকর্মী—যে-ই থাকুক, তাকেই রোগীর প্রথম ডাক্তার হয়ে উঠতে হয়।
 
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে প্রতিবছর প্রায় এক কোটি আশি লাখ মানুষ হৃদরোগে মারা যায়। বাংলাদেশেও মৃত্যুর প্রধান কারণ এখন হৃদরোগ। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ অবস্থায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সিপিআর প্রশিক্ষণ ছড়িয়ে দেওয়াই হতে পারে প্রধান কৌশল।
 
 
টিডিডি/ এএইচআর