আবু সাঈদ হত্যার চূড়ান্ত প্রতিবেদন বিচারের পথে ঐতিহাসিক অগ্রগতি : সহযোদ্ধাদের প্রতিক্রিয়া

প্রকাশিত: ০১ জুলাই ২০২৫, ২০:৪৮

Thumbnail
ছবি সংগৃহীত

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) প্রথম শহীদ ছাত্রনেতা আবু সাঈদ হত্যা মামলায় সাবেক উপাচার্য ড. হাসিবুর রশিদকে প্রধান আসামি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সোমবার (৩০ জুন ২০২৫) মোট ৩০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ চূড়ান্ত করেছে। ইতোমধ্যে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে নতুন করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। বাকি ২৬ জন আসামির বিরুদ্ধেও একই ধরনের পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

ট্রাইব্যুনালের এই সিদ্ধান্ত রংপুরসহ দেশের শিক্ষাঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। শহীদ আবু সাঈদের সহযোদ্ধা ও আন্দোলনকারীরা একে 'বিচারের পথে একটি ঐতিহাসিক অগ্রগতি' হিসেবে দেখছেন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ তদন্ত সংস্থা তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সরাসরি জড়িত ছিলেন। তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাও সহযোগিতার ভূমিকা পালন করেছেন। তারা জানান, আবু সাঈদকে হয়রানি, হুমকি ও নজরদারির নির্দেশ এসেছিল প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায় থেকে। এমনকি ফরেনসিক রিপোর্ট পরিবর্তনেও পুলিশ কর্মকর্তারা সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন।

ছাত্রনেতা মুরসালীন মুন্না বলেন, আমরা চাই প্রকৃত অপরাধীরা বিচারকের কাঠগড়ায় দাঁড়াক এবং নির্দোষ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয়। শহীদ আবু সাঈদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে তার হত্যার নিরপেক্ষ ও দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে গণশুনানির ভিত্তিতে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলে আরও গ্রহণযোগ্যতা পেত। যারা দায়িত্বে থেকে একজন ছাত্রকে হত্যার পেছনে মদদ দিয়েছে, তারা যেন আর নৈতিকতা নিয়ে কথা বলতে না পারে। আমরা বহুবার বলেছি, এটি কোনো ব্যক্তিগত শত্রুতা নয়— বরং একটি সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। আজকের গ্রেফতারি পরোয়ানা সেই কথাই প্রমাণ করেছে।

ছাত্রনেতা সোহেল রানা বলেন,শহীদ আবু সাঈদ জুলাইয়ের আইকনিক শহীদ। আবু সাঈদ হত্যাকান্ডে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের মাধ্যমে বিচারকার্য সম্পন্ন করবেন এটাই সবার প্রত্যাশা। যার যার প্রাপ্য শাস্তিটুকু নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি এবং এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচারের মাধ্যমে এদেশের ইতিহাস তৈরী হবে ইনশাআল্লাহ।

আবু সাঈদের সহযোদ্ধা শাহরিয়ার সোহাগ বলেন, ৩০ জনের সম্পৃক্ততার কথা বলায় আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটরের বক্তব্যকে সাধুবাদ জানাই। তাঁর বক্তব্যে হত্যাকাণ্ডের মূলে উদ্ধতন পুলিশ কর্মকর্তারা এবং সহযোগীর ভূমিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রশাসন এমনটাই স্পষ্ট উঠে এসেছে। দ্রুত বিচার সম্পন্ন করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

সহযোদ্ধা শামসুর রহমান সুমন বলেন, আমরা বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় খুশি। তবে মনে করি, আরো কিছু পুলিশ সদস্যও এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে দায়ী— যারা ঘটনার আগে আবু সাঈদকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছিল। আমরা বিশ্বাস করি, এই বিচার শুধু আবু সাঈদের নয়— বরং জুলাইয়ের অন্যান্য শহীদদের বিচারও তরান্বিত করবে। এটি ইতিহাসে একটি বিচারিক মাইলফলক হয়ে থাকবে।

ওই ঘটনায় আহত আবরার সিয়াম বলেন, আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ড এখন আর শুধুমাত্র একটি মামলার বিষয় নয়; এটি বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনে জবাবদিহিতা ও নৈতিকতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্রেফতারি পরোয়ানাই যেন শেষ ধাপ না হয়— বরং তা যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির সূচনা করে। সময়ের দাবি হচ্ছে, বিচার হোক দ্রুত ও কার্যকরভাবে।

 

আরও পড়ুন