৪৭তম বিসিএসের সঠিক উত্তর, নম্বর ও কাট মার্ক ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে পিএসসিকে খোলা চিঠি
প্রকাশিত: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯:৫৩

৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রতিটি প্রশ্নের ‘সঠিক উত্তর’, প্রাপ্ত নম্বর এবং কাট মার্ক ওয়েবসাইটে প্রকাশের দাবিতে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) বরাবর খোলা চিঠি দিয়েছেন পরীক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীরা এই খোলা চিঠির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন।
এই সময় খোলাচিঠি পাঠ করেন ৪৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার পরীক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও চাকরি সংস্কার আন্দোলনের সংগঠক জালাল আহমদ,খোলাচিঠির সংগঠক মোঃ ইলিয়াস, বিসিএস পরীক্ষার্থী এনামুল হক জমিদার এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ও বিসিএস পরীক্ষার্থী কাজী আশফিক রাসেল প্রমুখ।
এ সময় উপস্থিত পরীক্ষার্থীরা আগামী ৩ দিনের মধ্যেই এবারের ৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রতিটি প্রশ্নের 'সঠিক উত্তর', প্রাপ্ত নম্বর এবং কাট মার্ক’ ওয়েবসাইটে প্রকাশের দাবি জানান।
পিএসসির চেয়ারম্যান ও সদস্যদের কার্যক্রমে ক্ষোভ প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের শিক্ষার্থী জালাল আহমদ বলেন, ‘দুনিয়া কাঁপানো চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী শাসকের পতনের পর গঠিত বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান এবং সদস্যদের প্রতি উচিত ছিল প্রতিটি প্রিলিমিনারি পরীক্ষার পর প্রতিটি প্রশ্নের 'সঠিক উত্তর' ওয়েবসাইটে প্রকাশ,নিয়োগ পরীক্ষায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে নাম্বার সহ ফলাফল প্রকাশ, একইসঙ্গে একাধিক চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা এড়াতে মনিটরিং সেল গঠন সহ শিক্ষার্থীবান্ধব বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশার পারদ আরও বৃদ্ধি করা।কিন্তু তাঁরা শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন।’
জালাল আহমদ আরো জানান, ‘আমরা ২০১৩, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারী চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি ৫৬% থেকে ৭% এ নামিয়ে আনতে পেরেছি। কিন্তু বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে শুধুমাত্র ‘কোটা’ পদ্ধতির ‘সংস্কার কিংবা কোটা বাতিল’ করলেই সরকারি চাকরিতে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ হবে না।তাই প্রতিটি নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফলেও ‘স্বচ্ছতা’ নিশ্চিত করতে হবে।
বিষয়টি নিয়ে আমরা গত ২০২৩ সালের ১৮ অক্টোবর প্রথমবার পিএসসি কে স্মারকলিপি দিয়েছিলাম।আমাদের কিছু দাবি পূরণ হয়েছে।যেমন ‘ভাইভার মার্ক কমানো, আবেদন ফি কমানো ইত্যাদি।পরবর্তীতে আমরা ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফায় পিএসসি কে স্মারকলিপি দিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের দাবি পূরণ না হওয়ায় অধিকার আদায়ের জন্য আমরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছিলাম ।আমাদের দাবি গুলো বাস্তবায়ন করবে বলে পিএসসি এবং সরকারের পক্ষ থেকেই আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল । কিন্তু আমাদের কোনো দাবি ই বাস্তবায়ন হয়নি।’
এ সময় চাকরিতে নিয়োগ পদ্ধতি সংস্কারের জন্য পরীক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ৯ দফা দাবি খোলা চিঠির মাধ্যমে পিএসসির কাছে তুলে ধরা হয়।
দাবি গুলো হলো:
১) প্রশ্নপত্রের 'সঠিক উত্তর এবং কাট মার্ক’ ওয়েবসাইটে প্রকাশ : প্রতিটি প্রিলিমিনারি পরীক্ষার পর প্রতিটি প্রশ্নের 'সঠিক উত্তর' ওয়েবসাইটে প্রকাশ হবে।’কাট মার্ক’ কত নম্বর তা ওয়েবসাইটে জানাতে হবে ।
২) সকল চাকরির পরীক্ষায় মানসম্মত এবং ভারসাম্যমূলক প্রশ্ন পত্র তৈরি: মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় মানবিক,ব্যবসা এবং বিজ্ঞান এই তিনটি গ্রুপের সিলেবাসের কথা চিন্তা করে বিসিএস পরীক্ষা সহ সকল চাকরির পরীক্ষায় মানসম্মত এবং ভারসাম্যমূলক প্রশ্ন পত্র তৈরি করতে হবে।
৩)সকল চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত:
বিসিএস পরীক্ষা সহ সকল চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা, লিখিত পরীক্ষা এবং ভাইভার নাম্বার সহ ফলাফল প্রকাশ করতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ - পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলো যেমন ভর্তি পরীক্ষার নাম্বার সহ ফলাফল প্রকাশ করে, তেমনি চাকরিতে নিয়োগদাতা সকল কর্তৃপক্ষকে তাদের নিয়োগ পরীক্ষার নাম্বার সহ
ফলাফল প্রকাশ করতে হবে। তাহলে চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।
৪)নন ক্যাডার বিধি-২০২৩ সংশোধন করে উত্তীর্ণ সবার চাকরির সুযোগ সুনিশ্চিত করা: নন ক্যাডার বিধি-২০২৩ এমনভাবে সংস্কার করতে হবে যাতে বিসিএস পরীক্ষায় প্রিলি ও রিটেন পাস করে ভাইবা তে উত্তীর্ণ হলেই সবাই সরকারি / আধা সরকারি কোন না কোন চাকরি পায়।
৫)পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ‘মাইগ্রেশন স্টাইল’ চালু: প্রতিটি ক্যাডারের প্যানেল বা ওয়েটিং লিস্ট এর ব্যবস্থা করতে হবে। সেটা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো মাইগ্রেশন স্টাইল চালু করে মাইগ্রেশনের মাধ্যমে প্যানেল থেকে নিয়োগ দিলে পদ আর শূন্য থাকবে না। বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ দক্ষ জনশক্তি থেকে গেজেটের আগ পর্যন্ত যতগুলো পদ খালি থাকবে, ততগুলো পদ পূরণ করতে হবে।
৬)ক্যাডারে ও নন ক্যাডারের জন্য একই ব্যক্তি কে একই ক্যাডারে একাধিকবার সুপারিশ করা যাবে না।পিএসসির অধীনে এই সংক্রান্ত একটি ‘ডাটাবেস’ তৈরি করতে হবে
৭)কম খরচে খাতা পুন:নিরীক্ষণ করার সুযোগ: কম খরচে লিখিত পরীক্ষার পর দ্রুত সময়ে খাতা পুনঃনিরীক্ষণ করার সুযোগ দিতে হবে।
৮)কারিগরি ত্রুটি দূর করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে: টেলিটকের কারিগরি ত্রুটি অথবা কর্মীদের কাফিলতির কারণে অনেকে চাকরি পরীক্ষায় টিকলেও তাদের কাছে এসএমএস আসে না। ওয়েবসাইট থেকে ফলাফল জানার পরে রিটেনে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। ৪৬ তম বিসিএস এর রিটেনে এ ধরণের সমস্যায় পড়েছিলেন অনেক চাকরিপ্রার্থী। প্রিলিতে টিকলেও তাদের কাছে এসএমএস আসেনি, লিখিত পরীক্ষা দিতে গিয়ে তারা দেখেছে সিটপ্লানে তাদের নাম নেই। অনেক হয়রানি ও ভোগান্তি পোহানোর মধ্য দিয়ে তাদের লিখিত পরীক্ষা দিতে হয়েছে।
৯) এক বছরের মধ্যেই একটি ব্যাচের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করতে হবে: যেকোনো ধরনের চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়ার পর থেকে ৬ মাসের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করে নিয়োগ চূড়ান্ত করতে এবং বিসিএস এর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১ বছরের মধ্যে কার্যক্রম শেষ করতে হবে।