পবিত্র ঈদুল আজহা : আল্লাহর নৈকট্য লাভের বড় উপলক্ষ

প্রকাশিত: ৩০ মে ২০২৫, ২০:৪৮

Thumbnail
ছবি : সংগৃহীত

ঈদ মানেই আনন্দ, আর কোরবানি হলো সেই আনন্দে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে ত্যাগের এক মহান প্রকাশ। ঈদুল আজহা হচ্ছে আত্মত্যাগ ও ইবাদতের আনন্দঘন উৎসব , যেখানে ত্যাগের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়াই প্রকৃত সফলতা। এই কোরবানির ঐতিহ্য মানব ইতিহাসের শুরু থেকেই চলে আসছে।

মুসলমানদের দুটি প্রধান ধর্মীয় উৎসব হলো ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা। 'আজহা' শব্দের অর্থ কোরবানি, জবাই কিংবা কোরবানিকৃত পশু। শব্দটির আরেকটি অর্থ ছাগল—এ কারণেই একে কখনো কখনো ‘বকরি ঈদ’ও বলা হয়। ধর্মীয় পরিভাষায়, কোরবানি বলতে জিলহজ মাসের ১০ তারিখ সকাল থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ে নির্দিষ্ট পশু আল্লাহর উদ্দেশ্যে জবাই করাকে বোঝায়।

সামর্থ্যবান নারী ও পুরুষের জন্য কোরবানি করা একটি ওয়াজিব ইবাদত, যা গুরুত্বে প্রায় ফরজের সমতুল্য। এটি পালন করা ইসলামি শরিয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান।

আল্লাহ তাআলা কোরআনে ইরশাদ করেন, “সকল জাতির জন্য আমি কোরবানির বিধান নির্ধারণ করেছি, যেন তারা আল্লাহর দেওয়া জীবিকা—চতুষ্পদ জন্তু জবাই করার সময় তাঁর নাম স্মরণ করে।” — (সূরা হজ, আয়াত ৩৪)

আরও বলা হয়েছে, “আমি তোমাকে প্রাচুর্য দান করেছি। সুতরাং তোমার রবের জন্য সালাত আদায় করো এবং কোরবানি করো।” — (সূরা কাউসার, আয়াত ১-২)

নবী করিম (সা.) বলেন, “যার কোরবানি করার সামর্থ্য থাকার পরও সে তা করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।” — (ইবনে মাজাহ: ২১২৩; মুসনাদে আহমাদ: ৮২৭৩)

তবে শিশু বা নাবালকদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয়, যেমন তাদের ওপর কোনো ফরজ ইবাদত প্রযোজ্য হয় না। একইভাবে, হিজড়া ব্যক্তি যদি প্রাপ্তবয়স্ক এবং সামর্থ্যবান হয়, তবে তার ওপরও কোরবানি, নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাতের মতো অন্যান্য ফরজ ইবাদতের মতো কোরবানিও ওয়াজিব হবে।

কোরবানি মহান আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভের অন্যতম মাধ্যম। পবিত্র কোরআনের সূরা আনআমে এসেছে, 'আপনি বলুন, নিঃসন্দেহে আমার সালাত, আমার কোরবানি, আমার জীবন, আমার মৃত্যু সবকিছুই আল্লাহর জন্য।' আল্লাহ আরও বলেন: 'আল্লাহর নিকট পশুর গোশত ও রক্ত পৌঁছায় না, বরং তোমাদের তাকওয়া পৌঁছে।'

কোরবানি আমাদের শেখায় আল্লাহর জন্য প্রিয় বস্তু ত্যাগ করতে প্রস্তুত থাকা উচিত। মহানবী ইব্রাহিম (আ.) আল্লাহর আদেশে নিজ পুত্র ইসমাঈল (আ.)-কে কোরবানি করতে প্রস্তুত হয়েছিলেন। আল্লাহ তাঁর এই খালেস নিয়ত ও আনুগত্যের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে ইসমাঈলের বদলে একটি পশু কোরবানির আদেশ দেন। বিবরণটি পবিত্র কোরআনে এসেছে, ইব্রাহিম বললেন, ‘হে বৎস, আমি স্বপ্নে দেখেছি, তোমাকে আমি কোরবানি করছি, তোমার অভিমত কী?’ সে বলল, ‘হে আমার পিতা! আপনি যা আদিষ্ট হয়েছেন তাই করুন। আল্লাহর ইচ্ছায় আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন।’ যখন তারা উভয়ে আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইব্রাহিম তার পুত্রকে কাত করে শোয়াল, তখন আমি তাকে ডাক দিয়ে বললাম, ‘হে ইব্রাহিম, তুমি তো স্বপ্নাদেশ সত্যই বাস্তবায়ন করলে!’ এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদের পুরস্কৃত করি। নিশ্চয়ই এটা ছিল সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি তাকে মুক্ত করলাম এক মহান (দুম্বা) কোরবানির মাধ্যমে। আমি এটা পরবর্তীদের জন্য স্মরণীয় করে রাখলাম। ইব্রাহিমের জন্য অভিবাদন! আল্লাহর পক্ষ থেকে শান্তি ও শুভেচ্ছা। (সুরা- সফফাত)

কোরবানি আমাদের জন্য গুনাহ মাফের বিরাট একটি সুযোগ। হাদীসে এসেছে, কোরবানির পশুর প্রতিটি রোমের বিনিময়ে একেকটি সওয়াব হয় এবং তা গুনাহ মোচনের উপায় হতে পারে।

এটি কেবল আনন্দের উৎসব নয়, বরং আত্মত্যাগ, ইবাদত ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের বড় উপলক্ষ।