‘স্বপ্নের ফেরিওয়ালা’ নোবিপ্রবির লাল ও নীল-সাদা বাস
প্রকাশিত: ১৫ আগস্ট ২০২৫, ২১:২৯

প্রতিবছর এক বুক স্বপ্ন নিয়ে প্রথমবর্ষে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন একঝাঁক মেধাবী স্বপ্নবাজ। তাদের পদচারণায় ক্লাসরুম থেকে শুরু করে প্রাণবন্ত হয় খেলার মাঠ, শান্তিনিকেতনের চায়ের আড্ডা, নীল দিঘি পাড়। নবীণদের পেয়ে প্রশান্তি পার্কের স্নিগ্ধ বাতাসও যেনো হয়ে উঠে আরও মোলায়েম। অডিটোরিয়ামের ঝিলিমিলি নৃত্যের ধ্বনি, গোলচত্বর মিনার, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী ও লাল, নীল-সাদা বাস তাদের পদচারণায় নতুন করে প্রাণ ফিরে পায়।
হাজার হাজার শিক্ষার্থীর অনুভূতি আর ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ১০১ একরের নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি)। এই ভালোবাসার জায়গায় সৌন্দর্য আবেগের সাখে মিশে আছে নোবিপ্রবির লাল, নীল-সাদা বাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ক্যাম্পাসের প্রথম স্মৃতি হয়ে থাকে বাসগুলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যারেজে দাঁড়িয়ে থাকা বাসগুলো যেন শিক্ষার্থীদের চায়ের সাথে গল্প আড্ডার সাথী। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এই বাস ঘিরে তৈরি হয় শত স্মৃতি, গড়ে ওঠে সম্পর্ক, তৈরি হয় নতুন বন্ধুত্ব। ক্যাম্পাসে যাওয়া-আসার এ যানবাহন নিয়ে আবেগ, রোমাঞ্চগাথা স্মৃতি জড়িয়ে থাকে নোবিপ্রবিয়ানদের মনে।

নীল-সাদা বাসগুলো যেন শিক্ষার্থীর স্বপ্ন ফেরি করে বেড়ায়। ক্যাম্পাস জীবনে অনেকেরই বড় একটি সময় কাটে এ বাসে। বাসে উঠলেই বোঝা যায়, কারোরই ঝোলায় গল্পের শেষ নেই। গন্তব্য শেষ হলেও যেনো গল্প শেষ হয় না। দিনের শুরু থেকে রাত অব্দি সবার ক্লাস বা পরীক্ষা, টিউশনিতে সময়মতো পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব এই ফেরিওয়ালার।
এই লাল, নীল-সাদা বাসের প্রতি শিক্ষার্থীদের ভালোবাসা টের পাওয়া যায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিবহন চত্বরে গেলেও। বাসের সামনে দাঁড়িয়ে দল বেঁধে ছবি তোলার চিত্র দেখা যায় নিয়মিত। বিশেষত, প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য তো এটি রীতিমতো ‘অবশ্যকর্তব্য’। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে নিজেদের এই আনন্দ সবার সঙ্গে ভাগ করে নেন তারা।

বাসের নামগুলোও মন কাড়ানো। বাসগুলোর নাম রাখা হয়েছে সুগন্ধি মিষ্টি ও আদরমাখা ফুলের নামে। রয়েছে- গন্ধরাজ, ডালিয়া, হাসনাহেনা, চন্দ্র মল্লিকা, মালতী, সূর্যমুখী।
ক্যাম্পাসের বাসে দল বেঁধে যাতায়াত করতে করতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি আলাদা বন্ধনও তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থী মিলন মুন্সি।
তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাসের বাসে নিয়মিত যাতায়াত করলে বাসকেন্দ্রিক একটা কমিউনিটি গড়ে ওঠে। অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একটা সখ্যতা তৈরি হয়। আমরা যারা অনাবাসিক শিক্ষার্থী, তাদের জন্য এটি একটি বড় সুযোগ।’দেখা যায়, দুজন দুই বিভাগের শিক্ষার্থী, ব্যাচও আলাদা, অথচ বাসযাত্রার সুবাদেই তারা হয়ে ওঠেন কাছের বন্ধু। এই বন্ধুত্ব ও বন্ধনই তো বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ।
সমাজ কর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী তনয় মনে করেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধুর্যতা পূর্ণতা দান করতে যেন প্রাণ ভোমরার ভূমিকায় অবির্ভূত হয়েছে নীল-সাদা বাসগুলো। কখন বাসের সাথে ছবি তুলব, কখন একটু প্রেমাবেশে তার ছায়ার পাশে এক টুকরো ভালোবাসা স্বাদ আচ্ছ্বাদন করব। দল বেঁধে বাসগুলো যখন শহরের রাস্তাগুলো দাপিয়ে বেড়াতে বের হয় মনে হয় সাদা নীল-লাল তরুণী কতই না স্নিগ্ধতার আবেশ ছড়াতে চাকাগুলো ছুঁড়ে দেওয়ার সাথে সাথে ভেসে যাচ্ছে। নোবিপ্রবির এই লাল-সাদা বাস গুলো যেন একটা বড় বিজ্ঞাপন। নোবিপ্রবির শিক্ষার্থী হতে পেরে যতটা গর্বিত ততটাই গর্বিত নিয়মিত যাত্রী হতে পেরে। এ কেবল বাস নয় এটা আমাদের অন্তরের প্রশান্তির একটি বাহনও বটে। আমাদের আবেগ, আমাদের গর্ব। ওহে অনাগত নবীনরা! তোমরাও সাক্ষী হও, এই লাল-সাদা বাসের কোণে তুমিও লিখিও, তুমিও বলিও তোমার কষ্ট, আনন্দ কিংবা সুখ কোন এক ভীষণ একলা দিনে।
টিডিডি/ এএইচআর